পিসি বা ল্যাপটপে কোনও তথ্য ডিলিট করলে তা জমা হয় রিসাইকেল বিনে। এটা হলো মুছে ফেলা তথ্যের ভাগাড়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এরকম রিসাইকেল বিন গ্রুপ বা পেজ রয়েছে, যেখানে মুছে ফেলা কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। বরং পাওয়া যায় লোকজনের ব্যবহৃত পোশাক, আসবাবপত্র, ইলেক্ট্রিক আইটেম, গ্যাজেটস, মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট ইত্যাদি। অনেক সময় নতুন পণ্যও পাওয়া— যা ব্যবহার করা হয়নি, বহুদিন ধরে ঘরে পড়ে আছে। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আছে— এমন সব পণ্যও পাওয়া যায় রিসাইকেল বিনে। এক কথায় বলা যায়, কী নেই রিসাইকেল বিনে!যার অনেক আছে বা প্রয়োজন নেই এমন জিনিসে ঘর ভর্তি, অথচ বিক্রি করে দিলে কিছু টাকা পাওয়া যাবে।
আবার এই পণ্য যিনি কিনবেন তারও সাশ্রয় হবে— এমনই একটি প্ল্যাটফর্ম হলো রিসাইকেল বিল। ফেসবুক ঘেঁটে অন্তত এ রকম ৬টি রিসাইকেল বিনের খোঁজ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংখ্যা আরও বেশি। কুমিল্লার বাইরেও বিভিন্ন জেলাভিত্তিক রিসাইকেল বিন গ্রুপ বা পেজের খোঁজ পাওয়া গেছে।একই নাম, একই প্ল্যাটফর্ম, আবার সবার উদ্দেশ্যও প্রায় একই— পুরনো জিনিস বিক্রি। যাদের সামর্থ্য আছে তারাও যেমন এখান থেকে জিনিসপত্র কিনছেন, আবার যাদের নেই, তারাও। অনেকের হঠাৎ টাকার প্রয়োজন, তার অনেক ড্রেস আছে, বা পুরনো সোফা বা ফ্রিজ বিক্রি করে দিয়ে নতুন কিনতে চান, তিনিও এই প্ল্যাটফর্মে বিক্রি করে কিছু আয় করতে পারেন।
আবার যার হাতে অল্প টাকা আছে কিন্তু তার ফ্রিজ বা সোফা কেনা প্রয়োজন, তিনিও তার বাজেটের মধ্যে এখান থেকে কিনতে পারছেন। অনেকের কাছে নতুন পাঞ্জাবি আছে, যা সাইজের কারণে পরা হয় না বা একাধিক মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট রয়েছে, যার সবগুলোর প্রয়োজন নেই। তিনিও রিসাইকেল বিনে গিয়ে বিক্রি করে দিতে পারেন। আর এই কেনাবেচার মধ্য দিয়েই জনপ্রিয়তা পেয়েছে রিসাইকেল বিন।কী আছে রিসাইকেল বিনেরিসাইকেল বিন ঘেঁটে দেখা গেলো, স্বল্প ব্যবহৃত বা ব্যবহৃত কিংবা ঘরে পড়ে থাকা মোবাইল ফোন, ট্যাব, টেবিল, জামা কাপড়, এসি, শোকেস, ডায়েরি, সেলফি স্টিক, ফুলদানি, ট্রলি, ক্যামেরা, আইফোন, রিস্ট ব্যান্ড, বইয়ের তাক, হেডফোন, রাউটার, সোফা, রাইস কুকার, বাচ্চাদের কাপড়চোপড়, সেলাই মেশিন, বাসন-কোসন, বিয়ের শাড়ি, ক্রোকারিজ ইত্যাদি বিক্রির জন্য পোস্ট দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিক্রির তালিকায় আরও পাওয়া রয়েছে— ফ্রিজ, জুতা স্যান্ডেল, শার্ট, মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট, ফুলের টব, রুম হিটার, বাচ্চাদের পড়ার টেবিল, হিজাব, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, পার্স, ওয়ার্ডরোব, মোবাইল ভ্যান, জুয়েলারি, ফার্নিচার, টেবিল ফ্যান, মেকআপ বক্স ইত্যাদি।নাম এক হলেও রিসাইকেল বিনগুলোর সদস্য সংখ্যা আর হোম পেজ দেখে কেবল আলাদা করা যায়। এমনই একটা রিসাইকেল বিনের সদস্য সংখ্যা সাড়ে ১১ হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে ।
গ্রুপটির প্রতিষ্ঠাতা ও অ্যাডমিন সুমাইয়া ইসলাম সিন্থিয়া জানান, তিনি গ্রুপটি খোলা হয়েছে ১৩ অক্টোবর ২০২০। তিনি আরো বলেন কুমিল্লাতে তাদের গ্রুপটি প্রথম কিন্তু অনেকেই নাম পরিবর্তনের ফলে তাদের মেম্বার কম। তবে একই নামের আরও কয়েকটি ‘রিসাইকেল বিন’ থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষ কনিফিউজড হয়ে যায় এতগুলো রিসাইকেল বিন দেখে। আমরা আমাদের সেবা দিয়ে সেই কনফিউশন দূর করার চেষ্টা করছি।’সিন্থিয়া এটাকে সামাজিক উদ্যোগ হিসেবে দেখেছেন। আর্থিক কোনও বিষয় এটাতে কখনও সম্পৃক্ত হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।তিনি পেশায় গৃহিনী সুমাইয়া ইসলাম সিন্থিয়া বলেন, ‘মেয়েরা কোনও ড্রেস কিনে একবার পরে ছবি তুলে ফেসবুকে শেয়ার করলে, পরে আর সেটা পরতে চায় না। এভাবে অনেক কাপড় জমে যায়— যা কাউকে দিয়ে দিতে পারে না, বা বিক্রিও করতে পারে না। এটা এক ধরনের সমস্যা। এই প্ল্যাটফর্ম সেই সমস্যা দূর করেছে। যাদের যেটা দরকার নেই, তারা সেটা এখানে বিক্রি করে দিতে পারে। আবার যার যেটা প্রয়োজন সে তা সাশ্রয়ী মূল্যে কিনে নিতে পারে। এক পক্ষের প্রয়োজন মিটলো, আবার অন্যপক্ষের কিছু আয়ও হলো।
’তিনি বাংলানিউজওয়ানকে জানান, অনেকের বেশি বেশি কাপড় চোপড় থাকে, থাকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অন্যান্য জিনিসিপত্র। এমন অনেক মানুষ আছে যারা নিডি ও শিক্ষার্থী। নতুন কিছু কিনতে পারে না। তাদের কথা ভেবেই আসলে আইডিয়াটা মাথায় আসে। তিনি ছাড়াও তার গ্রুপের আরেকজন অ্যাডমিন হলেন এ ডি বি শামীম । এছাড়া ফাইজা ইসলাম ইফতিয়া মডারেটর হিসেবে রয়েছেন।গৃহিনী হওয়ার পাশাপাশি যে সময়টুকু পান, সেটা তিনি রিসাইকেল বিনের পেছনে ব্যয় করেন। জানা গেছে, তার গ্রুপে রোজ ৩০-৫০টি পোস্ট পড়ে। কিন্তু শর্ত না মানায় সবগুলো অনুমোদন পায় না। যারা শর্ত মেনে পোস্ট দেন তাদেরগুলো অনুমোদন পায়। তার গ্রুপে প্রতিদিন অন্তত ১৫ জন নতুন সদস্য যুক্ত হন।
জেনিফার পলি____১৮ জানু ২১
Leave a Reply